কোজাগরীর দিন বিষণ্ণ জলদাপাড়া: ভেসে গেল সেতু, ডলোমাইট পলিতে তলিয়ে গেল তৃণভূমি, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সাফারি | The 4th Column

কোজাগরীর দিন বিষণ্ণ জলদাপাড়া: ভেসে গেল সেতু, ডলোমাইট পলিতে তলিয়ে গেল তৃণভূমি, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সাফারি

নিউজডেস্ক, দ্য ফোর্থ কলাম, আলিপুরদুয়ার, ৬ অক্টোবর ২০২৫ :-

পর্যটনের ভরা মরশুমে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কার্যত পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে একশৃঙ্গ গণ্ডারদের আবাসভূমি জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। কোজাগরী পূর্ণিমার দিনেই এই অঞ্চলের মূল আকর্ষণ জঙ্গল সাফারি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে বনবিভাগ। হলং নদীর জলের তোড়ে দুর্বল কাঠের সেতু ভেসে যাওয়ায় জিপসি ও হাতি সাফারির টিকিট কাউন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাফারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটকদের মধ্যে বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়েছে। পর্যটন সংস্থাগুলির মাথায় হাত পড়েছে, কারণ কবে থেকে ফের জঙ্গল সাফারি শুরু করা যাবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেননি সোমবার জলদাপাড়ায় ছুটে আসা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা এবং রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (হফ) দেবল রায়ও।
পলির তলায় সাভান্না তৃণভূমি: খাদ্যের অভাবে বন্যপ্রাণীর জীবন আশঙ্কা
পর্যটন ব্যবসার এই ক্ষতির পাশাপাশি আরও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন জলদাপাড়া। তোর্সা ও শিশামারা নদীর জলস্তর কিছুটা কমে এলেও, জলে বয়ে আসা পলি ও ভুটানের ডলোমাইট মিশ্রিত পলির স্তরের গড়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট নিচে তলিয়ে গিয়েছে জাতীয় উদ্যানের বিস্তীর্ণ সাভান্না তৃণভূমি।
বনকর্তারা আশঙ্কা করছেন, এই থকথকে ডলোমাইট যুক্ত পলি মাটিতে সবুজ ঘাস গজিয়ে উঠতে সময় নেবে। সামনে আসছে শুখা মরশুম, ফলে এক শৃঙ্গ গণ্ডারসহ হাজার হাজার তৃণভোজী বন্যপ্রাণীদের খাদ্য ভান্ডারে টান পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে জঙ্গল মহলে। বনদপ্তর যদিও এখনও পলিময় বনভূমির ক্ষতির সঠিক জরিপ করতে পারেনি।
প্রকাশ্যে বন ও পর্যটন দপ্তরের সংঘাত
দুর্যোগের পর জলদাপাড়ায় ছুটে আসা মন্ত্রী ও বনকর্তারা স্বীকার না করলেও, হলং নদীর উপর দুর্বল কাঠের সেতু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বন ও পর্যটন দপ্তরের মধ্যে যে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন ছিল, তা এদিন প্রকাশ্যে এসেছে। হলংয়ের কাঠের সেতু ছাড়াও জঙ্গলের ভেতরে থাকা আরও দুটি কাঠের সেতুও বন্যায় ভেসে গিয়েছে। তবে, ভেসে যাওয়া কাঠের সেতু তৈরি করা নিয়ে যাতে দুই দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব না ঘটে, তা নিজে দায়িত্ব নিয়ে দেখভাল করার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা।
পর্যটক উদ্ধার ও বক্সার পরিস্থিতি
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর এদিন সাতসকালে পে-লোডারের সাহায্যে জলদাপাড়া ট্যুরিজম লজে আটকে থাকা মোট ২০ জন পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও শিশামারা নদী লাগোয়া এলাকার বেসরকারি পর্যটক আবাসে আটকে পড়া আরও ১২৮ জন পর্যটক এদিন নিরাপদে বাড়ি ফিরে গেছেন।
অন্যদিকে, জলদাপাড়া প্রকৃতির কোপে বিপর্যস্ত হলেও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প। ৫ অক্টোবরের মেঘ ফাটা বৃষ্টির কোনো প্রভাবই পড়েনি এই বাঘবনে, ফলে সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা স্বাভাবিক রয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
পর্যটনের ভরা মরশুমে সাফারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম উদ্বেগে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ইস্টার্ন ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন। বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। এরপর অনশনে বসা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।”
জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও প্রভিন কাসোয়ান জানিয়েছেন, “জঙ্গলের তৃণভূমির ক্ষতির জরিপ করা এখনও সম্ভব হয়নি। তবে এখানে কোনোও বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। যে কয়েকটি গন্ডার ভেসে গিয়ে ডাঙায় অবস্থান করছে, তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু ঠিক কবে থেকে জঙ্গল সাফারি শুরু করা যাবে তা এখুনিই বলা সম্ভব হবে না।”

Leave a Reply

You cannot copy content of this page

error: Content is protected !!