স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর আলোর ছোঁয়া বক্সার দুর্গম আদমায় | The 4th Column

স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর আলোর ছোঁয়া বক্সার দুর্গম আদমায়
নিউজ ডেস্ক, দ্য ফোর্থ কলাম আলিপুরদুয়ার, ৭ মে ২০২৫ :

— এবার বৈদ্যুতিক আলো জ্বলবে বক্সা পাহাড়ের আদমা গ্রামে

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৭৮ বছর পর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে চলেছে বক্সা পাহাড়ের কোলে ভারত-ভুটান সীমান্তের প্রত্যন্ত জনপদ আদমা। আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের নবনিযুক্ত মেন্টর মৃদুল গোস্বামীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে বিদ্যুতায়নের স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে।
দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগের আশায় দিন গুনছিলেন আদমাবাসী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে গ্রামের প্রায় ১৩০ জন বাসিন্দা রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অর্থ জমা দিয়েছিলেন। তবে তার পরেও গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। ফলে দিনের আলো নিভে গেলেই ঘন অন্ধকারে ডুবে থাকত এই দুর্গম জনপদ।
এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীরা তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে ছুটে যান জেলা পরিষদের মেন্টর মৃদুল গোস্বামীর কাছে। কালচিনি ব্লকের রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা আদম গ্রামেরই বাসিন্দা সোনম জঙ্গমো ডুকপা আক্ষেপের সুরে জানান, “স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের গ্রামে আজ পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছোয়নি। আমিও বহুবার এই দাবি নিয়ে সরব হয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”
আদমায় বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছাতে এত দেরি কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের আলিপুরদুয়ারের রিজিওনাল ম্যানেজার পার্থসারথি মন্ডল বনদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণ দর্শিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু বনদপ্তরের ছাড়পত্র না মেলায় ওই পাহাড়ি গ্রামে বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব হয়নি।”
তবে জেলা পরিষদের মেন্টর মৃদুল গোস্বামী গ্রামবাসীদের এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তিনি বলেন, “আদমার বাসিন্দাদের বিদ্যুতের সমস্যার কথা জানা মাত্রই আমি বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনাধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসি এবং জটিলতা কাটাতে সমর্থ হই। স্বাধীনতার এত বছর পরেও একটি পাহাড়ি দুর্গম জনপদ বিদ্যুৎ পরিষেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।”
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি জানান, “জেলা পরিষদের মেন্টরের সঙ্গে আমার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমাদের কাছে সরকারি নিয়ম মেনে আবেদন করা হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ছাড়পত্র দিয়ে দেবো। বাধা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না।”
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আদমায় বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। পাহাড় ঘেরা এই জনপদে বিদ্যুৎ পৌঁছলে আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটবে বলে আশা করছেন তাঁরা। মৃদুল গোস্বামীর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এলাকার মানুষের জীবনে এক নতুন আলোর দিশা দেখাবে।

Leave a Reply

You cannot copy content of this page

error: Content is protected !!